Search any words, questions and so on here.

আমেরিকায় ভ্রমণঃ ওরেগন এবং ওয়াশিংটন

আমেরিকায় ভ্রমণঃ ওরেগন এবং ওয়াশিংটন

আমেরিকার সবগুলো অঙ্গরাজ্যের একটা করে নিকনেম আছে। যেমন টেক্সাস এর নাম হলো লোন স্টার স্টেট (Lone Star State); টেক্সাসের পতাকার একাকী তারা থেকেই এই নামকরণ। ওরেগনের নিকনেম হলো Beaver State আর ওয়াশিংটনের Evergreen State. এভারগ্রীন গাছগুলো বিশাল লম্বা, প্রায় ৪০-৫০ ফুট। ওরেগন আর ওয়াশিংটনে গাছের ছড়াছড়ি। এই চমৎকার দুটো রাজ্য দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো অনেক আগে থেকেই। অলিম্পিক ন্যাশনাল ফরেস্টের প্রতি ছিলো প্রধান আকর্ষণ। একেতো আমেরিকার অপূর্ব জাতীয় উদ্যানগুলোতে তখনো পা রাখা হয়নি, আর এই উদ্যানটা আবার এক কাঠি সরেস; সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল, ঝর্ণা, সব কিছুর সমন্বয় এই এক জায়গাতেই। এই সামারে কোথাও যাব যাব করতে করতেই সময় চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে একরাতের আলোচনায় ওরেগন আর ওয়াশিংটন ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়ে গেলো। টিকেট কেটে অতঃপর আমাদের যাত্রা শুরু। অস্টিন এয়ারপোর্ট থেকে সুদূর পোর্টল্যান্ড, মাঝে যান পরিবর্তন হিউস্টনে। এরপর পাক্কা সাড়ে চার ঘন্টা আকাশে (তখনই পণ করে ফেলেছি নেক সাপোর্ট ছাড়া আর কোনদিনো কোন যাত্রায় যাচ্ছিনা।) পোর্টল্যান্ডের বিমানবন্দরে যখন পৌঁছলাম, তখন অনেক রাত। পরদিন অফিস থাকা স্বত্বেও করিম ভাই নিতে চলে আসলেন আমাদেরকে। পোর্টল্যান্ড হলো ওরেগনের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ শহর; তার পাশেই, আধাঘন্টা দূরত্বেই হিলসবরো; সেখানেই আমাদের ঠাঁই। হিলসবরোকে ইন্টেলের শহর বলতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলাম। এখানকার চেনা অচেনা সবাই বিভিন্নভাবে ইন্টেলের সাথেই জড়িত। রাতের বেলা যখন যাচ্ছিলাম বিশাল বিশাল এভারগ্রীন গাছগুলোর অস্তিত্ব দেখেই চমৎকার লাগছিলো, আর আবহাওয়া এত আরামদায়ক, যে ইতিমধ্যে এই পুরো জায়গাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। রাতে আইরিন আপু আর করিম ভাইয়ের চমৎকার সাজানো বাসায় এসে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

Cannon Beach, Oregon

- Cannon Beach, Oregon

পরদিন সকালে উঠে রওয়ানা দিলাম ভিস্টা হাউস আর মাল্টনোমাহ ফলস এর উদ্দেশ্যে। ওরেগনের এভারগ্রীন গাছ আর চমৎকার আবহাওয়ায় তখন আমাদের মেজাজ ফুরফুরে। ঘোরা শেষে রাতে চলে গেলাম লুবনা আপুর বাসায়। আপুর বাসার পাশেই বিশাল গাছগুলো। সকালে আপুর ডেকরূপী বারান্দায় সকালের নাস্তার সাথে চা খেতে খেতে মনে হচ্ছিলো এখানে বসেই সারাদিন কাটিয়ে দেয়া যায়। সেদিনের প্ল্যান হলো ক্যানন বিচ। ওরেগন এমনিতেই পাহাড়ি, তার ওপর যখন পঞ্চাশ ফুট গাছগুলোর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো একেবারে পর্বতের মাঝ দিয়ে গাড়ি চলছে। ক্যানন বিচকে হঠাৎ দেখলে কেমন মায়াময় একটা জায়গা মনে হয়। পানির কাছাকাছি কুয়াশা জমে আছে, আর কুয়াশা ফুঁড়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে কিছু পাথুরে পাহাড়। সমুদ্রের পানি কিন্তু এখানে বরফ শীতল, বালিতে বসে সমুদ্র উপভোগের জন্য এটা চমৎকার জায়গা, কিন্তু স্নানের জন্য একেবারেই না। দুপুরের পিকনিক আমরা করলাম ক্যানন বিচের পাশের ইকোলা স্টেট পার্কে। সমুদ্র দেখতে দেখতে আরামদায়ক রোদে বসে খিচুড়ি দিয়ে মাংস খাওয়ার আনন্দ কেমন হতে পারে, আন্দাজ করা যায় নিশ্চয়ই? খাওয়া শেষে আস্তে ধীরে রওয়ানা দিলাম হিলসবরোর উদ্দেশ্যে।

পরদিনের গন্তব্য মাউন্ট রেইনিয়ার ন্যাশনাল পার্ক। পুরো ট্রিপে সবচেয়ে ঝামেলার যে বিষয়টা লাগছিলো তা হলো মোবাইলের নেটওয়ার্ক। নেক সাপোর্টের পরে এই ট্রিপ এর দ্বিতীয় শিক্ষা হলো জিপিএস নিয়ে বের হতে হবে। বাংলাদেশের মত ছোট দেশ থেকে আসাতে শুরুতে জিপিএসের ব্যাপারটাকে নাক সিঁটকাচ্ছিলাম যে এমন কী জিনিস, মোবাইল আছে কি করতে? এই ট্রিপে বুঝলাম, এত বড় দেশের সব জায়গায় নেটওয়ার্ক সরবরাহ করা সম্ভব নয়, তাই হারিয়ে যেতে না চাইলে জিপিএসের ব্যবহার অপরিহার্য। ভাগ্যক্রমে যাদের সাথে ঘুরেছি, তারা এই বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলো, তাই হারিয়ে যেতে হয়নি। মাউন্ট রেইনিয়ারের ট্রেইলটা অত বড় না, কিন্তু ছিল বেশ খাড়া। উঠতে গিয়ে শ্বাসের সাথে যুদ্ধটা একটু কষ্টদায়ক ছিলো। তখন অতীতে মেঘালয় যাত্রায় পাওয়া এক ভাইয়ের উপদেশের কথা মনে পড়লঃ নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে হবে, মুখ দিয়ে নিলে ফুস্ফুসের ধারণক্ষমতা বাড়বেনা এবং দ্রুত হাঁপিয়ে যাবে। এই নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করে সেই খাড়া আল্টা ভিস্টা ট্রেইল দিয়ে উঠে পরে স্কাইলাইন ট্রেইল ধরে নেমে গেলাম। সাবিত আর আরিয়ানের মত পুঁচকি দুইটাও আইরিন আপু আর করিম ভাইয়ের হাত ধরে টুক্টুক করে উঠে গেল! এরা অবশ্য হাঁপিয়ে যাওয়া কন্সেপ্টের সাথে পরিচিত না এবং পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ের সাথেও না। আলটা ভিস্টার এক জায়গায় সাবিতকে নিয়ে নিচে নামার দায়িত্ব পড়লো আমার। সে কিছুতেই আমার হাত ধরে নামবেনা কারণ তার মতে সে একা নামার জন্য পুরোপুরি সক্ষম। পাশের খাদকে সে থোড়াই কেয়ার করে! পরে তার কাছে আমাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য সাহায্য চাওয়ার পরে সে দয়াপরবশ হয়ে আমার হাত ধরলো! হাইকিং শেষে খাবার দাবার সেড়ে এক দল ফেরত চলে গেল হিলসবরোতে আর আমরা চলে গেলাম হোটেলে পরদিনে অলিম্পিক যাত্রার জন্য।
আমেরিকা এতই বড় আর ছড়ানো যে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গা যেতে সময় লেগে যায় প্রচুর। এবং এই সময়ের সাথে শারীরিক ধকলও বেশি গাড়ির অত্যধিক গতির জন্য। অলিম্পিকে আসতে আসতে আমরা ততক্ষণে কিছুটা ক্লান্ত। কিন্তু পাহাড় আর জঙ্গলের সৌন্দর্য এই ক্লান্তিটাকে ভুলিয়ে দিচ্ছিল। রাতে কোথাও থাকার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আমরা যখন হিলসবরো ফেরত চলে আসলাম তখন আর নতুন কোথাও যাওয়ার শক্তি নেই। কিন্তু সকালবেলা সব বেমালুম ভুলে আমরা নতুন উদ্যমে মাউন্ট হুড আর ট্রিলিয়াম লেক দেখে চলে আসলাম! ট্রিলিয়াম লেক একেবারে পোস্টকার্ডের ছবিগুলোর মত; স্বচ্ছ লেকের পেছনে বরফঢাকা পর্বত।  রাতে বাসায় ফিরে সব গোছগাছ করলাম ফিরতি যাত্রার জন্য।

Mount Rainier, Washington

- Mount Rainier National Park, Washington

পরদিন সকালটা অন্যরকম আনন্দের ছিল। আরামের ঘুমের পরে সবাই ঝরঝরে, নতুন কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই আর ফেরার ফ্লাইট সেই সন্ধ্যায়। আপুর বাসার ডেকে বসে এই যাত্রার শেষ বারের প্রাতরাশ সেরে নিলাম। দুপুরে খাবারের দাওয়াত ছিলো আরেক ভাইয়ের বাসায়। সেখানে খাবার আর আড্ডায় সবাই এতই মশগুল হয়ে গেলাম যে এয়ারপোর্ট যাত্রার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে রওয়ানা দেয়া হলো। ফলাফলঃ আমেরিকা আসার পর এই প্রথম ঢাকার সেই মাথা ঠুকরোতে থাকা জ্যামের কথা মনে পড়ে গেলো! রাশ আওয়ারে পড়ে আধা ঘন্টার পথ যেতে লাগলো পাক্কা দুই ঘন্টা। অনলাইন চেক ইন না করে গেলে সেদিন প্লেনে আর উঠতেই দিত না। লাগেজ চেক ইনের সময় কাউন্টারের লোকটা হাসিমুখে জানিয়েও দিলো লাগেজ এই প্লেনের সাথে না গেলে তাদের দোষ নেই এবং এই মর্মে সাক্ষর নিয়ে উত্তাপহীন গলায় বলল, “I will run if I want to catch the plane!” আমরাতো দৌড়! মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য প্লেন মিস করা থেকে বাঁচলাম!

ফিরতি প্লেন জার্নি যাওয়ার জার্নির তুলনায় সহনীয় ছিলো মাঝে লাস ভেগাসে দুই-তিন ঘন্টার বিরতি থাকাতে। লাস ভেগাসের এয়ারপোর্টে ঢুকেই যে কেউ বলে দিতে পারবে এটা লাস ভেগাস, মিনি ক্যাসিনোর ছড়াছড়ি! এয়ারপোর্ট থেকে একটু বের হতে গিয়েছিলাম এসি থেকে বের হয়ে পুরো হতবাক, মনে হলো বাইরে লু হাওয়া বইছে। ওরেগনের আরামদায়ক আবহাওয়ার সেখানেই সমাপ্তি বুঝলাম। বিশাল জার্নি শেষে অস্টিন থেকে ড্রাইভ ব্যাক করে কলেজ স্টেশনে যাওয়ার শক্তি তখন কারোরই নেই। মুনমুন আপুর বাসায় ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে যখন কলেজ স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম, একবার মনে হচ্ছিলো,এত সুন্দর দুটো প্রদেশ দেখে আসার পরে টেক্সাসকে আর ভাল্লাগবেতো? দেড় ঘন্টা পর যখন কলেজ স্টেশনে ঢুকলাম, আপনা থেকে মনের মধ্যে চলে আসলো, “হোম, সুইট হোম

লেখক পরিচিতিঃ 

নাবিলা নাজনীন

===========================================================================================

যারা জি,আর,ই ভারবাল নিয়ে চিন্তিত তারা ভিডিও গুলো দেখতে পারেনঃ জি ,আর, ই হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড

জি,আর,ই জিওমেট্রি পার্ট নিয়ে যারা চিন্তিতঃ জিওমেট্রি ইন ওয়ান প্লে লিস্ট

You would also like to know: I20 is the most important document that you will need for a student visa in the USA.