Search any words, questions and so on here.

কানাডিয়ান ম্যাপল দেখবো বলে! পর্বঃ ১

কানাডিয়ান ম্যাপল দেখবো বলে! পর্বঃ ১

২০১৫ এর নভেম্বর কানাডার পি আর ভিসা পেলাম. ২০১৪ এর অগাস্ট যখন আবেদন করি তখন দেশে আমার চাকরির ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান দুটোই ভালো ছিলোনা তার উপর ছিল অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ফলাফল : পি আর এর আবেদন তদুপরি ২০১৫ হতে কানাডা সরকার ইমিগ্রেশন প্রণালীতে বিশেষ পরিবর্তন আন্তে যাচ্ছিল, তাই এরপর আর আবেদন করার সুযোগ থাকে কিনা তাও ওই সময় বিশেষ বিবেচণায় ছিল

যাই হোক, আসল প্রসঙ্গে আসি, আবেদন করার প্রায় দেড় বছর পর ভিসা পেলাম ইতিমধ্যে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির নাটকীয় (!) উন্নতি ঘটে ভালো কি মন্ধ তর্ক সাপেক্ষ কিন্তু রাজনীতির মাঠ আপাতত দীর্ঘ সময়ের জন্য এক দলীয় খেলায় পরিণত হয় সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করে এবং সরকারি চাকরির বেতন পরিণত হয় বেসরকারি স্ক্যালের সমান অথবা ক্ষেত্র বিশেষে ছাড়িয়ে যায় সকরকারী কাজ করে বেসরকারি বেতন, এর চেয়ে লোভনীয় আর কি হতে পারে?!! বেতন হয়ে গেলো প্রায় দ্বিগুন শুরু হলো কানাডা যাওয়ায় নিয়ে দোটানা

যাবো কি যাবোনা করে করে ভিসার মেয়াদ শেষ হবার এক মাস আগে তল্পি-তল্পা গুছিয়ে কানাডার লন্ডন শহরে আগমন লন্ডন আসার কারণ ওখানে ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছিলাম জুলাই ২০১৬ তে লন্ডন এর বাঙালি পাড়া (২৫১/২৬১ প্লেটস লেন) এসে উঠলাম এক পরিচিত বড় ভাইয়ের সহায়তায় উঠার পর আরো বেশ কিছু বুয়েটিয়ান সহপাঠীর দেখা মিললো

কানাডিয়ান সামার, তারউপর ক্লাস শুরু হতে দুমাস বাকি সুতরাং রঙিন দিনগুলি ভালোই কাটছিলো বন্ধুদের গাড়িতে সওয়ার হয়ে লন্ডন চরে বেড়ানো, লেক অন্টারিও/হুরণ অথবা এরির পার ধরে গাড়ি নিয়ে ছুটে চলা, পিকনিক, ঘর ঘুছানো...ভালোই কাটছিলো দিনগুলি, কিন্তু....

লন্ডন, অন্টারিও প্রধানত ভার্সিটি কেন্দ্রিক শহর তাই বাংলাদেশী যারা আছেন তারা প্রধানত বর্তমান ছাত্র অথবা প্রাক্তন ছাত্র কিন্তু নানা কারণে মায়ায় পরে রয়ে গেছেন ছাত্র হওয়াতে সামারের এই সময়টায় বিকেল ( টা থেকে টা) কিংবা সপ্তান্তে তারা প্রায়ই ফ্রি থাকেন তাই, ফ্রি গাড়ি , ফ্রি সময়...ঘুরতে মানা কি?! কিনতু সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো বাকি দিন নিয়ে একেতো দীর্ঘদিনের পুরোনো অভ্যাস , তার উপর কানাডার গ্রীষ্মের দীর্ঘ দিন (!), ঘরে বসে ফেসবুকিং করে করে সময় কাটানো টাফ হয়ে গেলো তাছাড়া সময় কাটাতে যতই ফেসবুকে ঢুকছি, ততই দেশের বন্ধুদের পোষ্ট দেখে বুকের ভিতর অজানা বেথাটা মুচড়ে উঠতে লাগলো ফেসবুকটাই আসলে যত নষ্টের মূল! ফেসবুকে তাদের রংচঙ্গে এবং ঝকঝকে পোস্ট দেখেই দেশে আসা আবার আসার পরে দেশের বন্ধুদের পোস্ট দেখে হতাশার শুরু!

ভাবলাম ক্লাশ শুরু হতে যেহেতু দেরি আছে, যাই একটু জব মার্কেট থেকে ঘুরে আসি শুরু করলাম চাকরি খোজ ওমা, একি অবস্থা?! আবেদন করবো কি? এখানে দেখি আমার ফিল্ডের জবের সার্ক্যুলারি নেই! বলে রাখা ভালো, দেশে চাকরি করতাম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সবে ধন নীল মনি ওই একটাই এয়ারলাইন না আছে কোনো ভবিষ্যৎ, না ছিল কোনো অতীত অন্যের অনুগ্রহের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা কখন উনি অবসরে বা মারা যাবেন আর তাতে পোস্ট ফাঁকা হবে এবং প্রোমোশনের সুযোগ আসবে তাও আবার প্রমোশন হবে সিরিয়াল অনুযায়ী নো চান্স ফর সিরিয়াল কিলার! (অর্থাৎ যতই যোগ্য হউন না কেন, দুনিয়ায় পরে এসেছেন তো পরে আসুন!) ফলাফল: বছর যাবৎ তাবৎ সময় একই পদে এবং আমার অধীন একজনই মাত্র বেক্তি- অফিস পিয়ন! সেও আবার নানা বেস্ততায় ঠিক মত সার্ভিস দিতো না!

আটলান্টিক সাগরের তল খোঁজার মতো সারা কানাডা জুড়ে, অনলাইন ঘুরে ঘুরে যত এয়ারলাইন্স বা এভিয়েশন সম্পর্কিত কোম্পানি ছিল, ওয়েবসাইট বের করে হেড অফ হিউমান রিসৌর্স অথবা হেড অফ মেইনটেনেন্স বরাবর সিভি পাঠাতে থাকলাম যদি লাইগ্গা যায় আর কি! কিন্তু লাগবেটা কোথায়? টার্গেট ফাঁকা বা আদৌ থাকলেতো! সারা রাত জেগে জেগে এপলাই এন্ড দিনভর ঝিমানোর দিন শুরু শেষে এমন হল, কোম্পানির নামের শুরুতে (A/AV, starting letters for any aviation related company, like aerotek, avia, AAA…though they are not all necessarily related to aviation! ) থাকলেই ঢু মারতে লাগলাম.......

স্বপ্নের আকাশে আনন্দ শেষে হতাশার কালো মেঘেরা আনাঘোনা শুরু করলো দেশে ফেলে আশা চাকরি, রুটিন করে সকাল টায় অফিসে যাওয়া, কলিগদের সাথে হালকা হাসি তামাশা, অফিসিয়াল লাঞ্চ, শীতকালীন পিকনিক, এয়ারপোর্ট এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো এসবের কথা মনে পড়তে লাগলো

লন্ডন শহর ছাত্র কেন্দ্রিক হওয়ার সুবিধা অসুবিধা দুটোই আছে সুবিধা হলো আশেপাশের সবাই মোটামুটি একই বয়সের এবং একই ব্যাকগ্রাউন্ডের হয় এতে মতের সাথে সাথে মনেরও মিল পাওয়া যায় যা সময় কাটানো অথবা হোম সিকনেস কাটাতে শুরুর দিকে খুবি গুরুত্বপূর্ণ আর অসুবিধার মধ্যে হলো ক্লাশ চলাকালীন ছাড়া বাকি সময়টাতে পুরো শহরটা খাঁ খাঁ করে লোকজন, বেচাবিক্রি কম হওয়াতে সারভাইভাল কাজের সুযোগ নাই বললেই চলে বিকেল টা বাজতে না বাজতেই দোকান পাট, রাস্তা ঘাট সবকিছুতে ঝাঁপ পড়ে যায় (পানশালা ব্যতীত!) . অথচ ওই সময়টাই হলো বাইরে বেরুবার, দলবেঁধে লাফাঝাফি করার উপযুক্ত সময় যা আমরা দেশে করে আসতে অভভস্থ কিন্তু এখানে আপনি রাস্তায় বেরুবেন, কি সুন্দর ছিমছাম চারিদিক, বৌয়ের হাত ধরবেন সাথে মনে ধরবেন গুনগুন গান ... মিনিট, ১০ মিনিট বা ১৫ মিনিট ভালোই লাগবে কিন্তু এরপরই একাকিত্ব বা নির্জনতার বিষাদ সিন্ধু আপনাকে গ্রাস করতে থাকবে আশেপাশে মানুষ না থাকলে বা নিজের ভালোলাগা কারো সাথে শেয়ার করতে না পারার ভিতর যে এতো অতৃপ্তি তা এর আগে আপনি কখনোই অনুভব করতে পারবেন না ধরেন আপনি খুব সুন্দর একটা মুভি দেখলেন, বা কোনো হাসির নাটক, মনে হয়না যতক্ষণ তা আপনি আপনার প্রিয়জনদের না দেখাচ্ছেন বা আলাপ করছেন ততক্ষণ উপভোগটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়? ঠিক এক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য সুন্দর পরিবেশ, সিনিক বিউটি, বিশুদ্ধ বাতাস কিন্তু যতক্ষণ না আপনি সে বাতাস বা সুন্দর্য অন্যের মাঝে বিলাতে পারছেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনার বুকের মাঝেই তা জমতে থাকবে এবং জমতে জমতে তা আপনার জন্য আনন্দের চেয়ে বেদনার বা হা হুতাশের ভারে পরিণত হবে, মনে হবে আহা যদি মা বাবাকে বা ছোট ভাইটিকে অথবা পাড়ার বন্ধুদের এই পরিবেশ দেখতে পারতাম! নিজে উপভোগ করছেন তাই নিজেকে ভাগ্যবান ভাবার চেয়ে তখন আপনজনদের দেখাতে পারছেন না এই দুর্ভাগ্যই বেশি ধরা পড়ে! (আত্ম্যকেন্দ্রিক বা unsocial হলে ভিন্ন কথা)

যাই হোক, প্রথম প্রথম মজা লাগলেও এরপর আস্তে আস্তে লন্ডনের সৌন্দর্য একঘেয়ে হতে শুরু করে আর বেশি বেশি মনে পড়তে থাকে ঢাকার রাস্তার যানজট, হকারের হাঁকডাক, রাস্তার পাশের টং দোকান অনেকেই হয়তো বলবেন এসব নোংরা, সেঁতসেঁতে, অস্বাস্থকর আমিও দ্বিমত করবোনা কিন্তু এসবতো আমাদের ফেলে আসা স্মৃতি স্মৃতিকি কখনো ওসাস্থকর হয়? স্মৃতি সবসময়ই সজীব সতেজ তা আপনি গুলশানেই বড় হন আর সীতাকুণ্ডের মতো গ্রামীণ জনপদ থেকে যা আপনি হারাবেন তা সবসময়ই মধুর!

এসব ভুলে থাকতে বেশি বেশি করে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং মনোযোগ দিলাম সিভি লেখার অনলাইন কোর্স, জব ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি, আসন্ন মাস্টার্সের জন্য ব্রিজিং প্রোগ্রাম হাবিজাবি ইত্যাদিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলাম মাঝে ২৫১ আর ২৬১ প্লেটস লেনের বাঙালিদের কয়েকভাগে করে ছোটোখাটো একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়ে গেলো যারা কখনো ফুটবলে ফুটি ফেলেনি তাদের মহা আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিন মাঠে হাজির হতে দেখে কাজী সালাউদ্দিনের প্লানিঙে কি কি ভুল থাকতে পারে তা গবেষণার একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ালো আমার কাছে!

দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে ক্লাশ শুরু হয়ে গেলো যাক এইবার বুঝি কর্মহীনতার দিন শেষ হলো বুকের ভিতর বুয়েট লাইফের মজার দিনগুলি ফ্ল্যাশ ব্যাক একের পর এক হাজির তর আর সয় না আবারো ফিরে যাবো ভার্সিটি লাইফের হৈহুল্লোরে পরিপূর্ণ সম্পূর্ণ নতুন জীবনে কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি ২০ বছর বয়সের এবং ৩২ বছর বয়সের ছাত্র জীবনের মাঝেযে ব্যবধান হাজারো ছত্রের তা ক্লাস শুরুর দু দিনেই টের পেলাম!

দ্বিতীয় পর্ব 

লিখেছেনঃ

Fahim Ahmed

Maintenance Program Engineer, De Havilland Aircraft of Canada Limited, Canada

Studied, Bangladesh University of Engineering and Technology

Facebook: https://www.facebook.com/fahim.ahmed.376

Email: fahim50509@yahoo.com

linkedin: https://www.linkedin.com/in/afm-fakhruddin-9b621739

===========================================================================================

যারা জি,আর,ই ভারবাল নিয়ে চিন্তিত তারা ভিডিও গুলো দেখতে পারেনঃ জি ,আর, ই হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড

জি,আর,ই জিওমেট্রি পার্ট নিয়ে যারা চিন্তিতঃ জিওমেট্রি ইন ওয়ান প্লে লিস্ট

You would also like to know: I20 is the most important document that you will need for a student visa in the USA.

Related Posts


Recent Posts


Categories


Tags