গবেষণায় হতাশা - কী করে করবেন মোকাবেলা?

লিখেছেনঃ ড. রাগিব হাসান

Dr. Ragib Hasan

Associate Professor,

Dept. of Computer and Information Sciences,

University of Alabama at Birmingham

He also leads the SECuRE and Trustworthy Computing Lab (SECRETLab).

And the founder of Shikkhok.com

 

গবেষকদের নিত্যদিনের সঙ্গী হলো ব্যর্থতা আর হতাশা। কখনো গবেষণার ফলাফল অনুকূলে আসে না, আবার কখনো গবেষণাপত্র বা পেপার রিজেক্ট হয়। এই হতাশা আসলে খুব ভয়াবহ একটা জিনিষ -- যে কারো কাজ কর্মকে একেবারে স্থবির করে দিতে পারে এই হতাশার অন্ধকার।

গবেষণার কাজে সফল হতে হলে এই হতাশাকে জয় করা শিখতে হবে। আমি "শিখতে হবে" বলছি, কারণ অন্য অনেক বিষয়ের মতোই মনের অন্ধকার দূর করাটা অনেকটা চর্চিত একটা ব্যাপার।

আসুন দেখা যাক, নানা কারণে কেনো গবেষকেরা হতাশ হতে পারেন, এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় --

১) গবেষণায় ব্যর্থ? -- আপনার গবেষণায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছেনা? অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছেন না? হতাশ হবেন না, অধিকাংশ গবেষণাই আসলে অনেক কঠিন, এবং ফলাফল পাওয়াটা অনেক কষ্টের। কাজটা সহজ যদি হতো তাহলে তো আর সেটা নিয়ে গবেষণার দরকার হতো না, তাই না?

আপনি কিন্তু একা নন। বহু গবেষক, উদ্ভাবক অনেক অনেক বার ব্যর্থ হয়ে তবেই দেখা পেয়েছেন সাফল্যের। এডিসনের গপ্পো তো সবাই জানে -- বৈদ্যুতিক বাতি বানাতে গিয়ে হাজার দশেক বার ব্যর্থ হয়ে তবেই তিনি সফল হন। কিন্তু এটাকে হতাশার কারণ হিসাবে না দেখে এডিসন বরং বলেছিলেন, এটা ব্যর্থতা নয়, বরং বৈদ্যুতিক বাতি কীভাবে বানানো যায় না, তার অনেকগুলা উপায় তিনি বুঝতে পেরেছেন।

কেবল এডিসন না, প্রায় সব বিজ্ঞানী ও গবেষকের সাফল্যই এক দিনে আসেনি, বরং এসেছে বহুদিনের চেষ্টার ফলে। সেজন্য ধরুন ধৈর্য্য, আপনি একাই ব্যর্থ হন, তা ভাববেন না, বরং ব্যর্থতার স্বাদ না পেলে সাফল্যের আনন্দ অনুভব করবেন কীভাবে, সেটাই রাখুন মনে।

২) পেপার রিজেক্টেড? -- গবেষণাপত্র বা পেপার কোনো কনফারেন্স কিংবা জার্নালে জমা দিয়ে রিজেক্টেড হবার পরে হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়াটা গবেষকদের জন্য খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। এক দুই বার রিজেক্ট হবার পরে গবেষকের মনে হতে পারে, তার সব কাজ নিরর্থক।

আপনাদের জন্য আমার এক বন্ধুর গল্প বলি। তার অনেক খেটে খুটে লেখা একটা পেপার পাঠালো নামকরা এক কনফারেন্সে। পত্রপাঠ প্রত্যাখ্যাত বা রিজেক্টেড হলো পেপারটা। রিভিউয়ারেরা বাজে রিভিউ দিলো। শুরুতে হতাশ হলেও বন্ধুটি আবার আশার আলো নিয়ে পেপারটার উন্নতি করে পাঠালো আরেকটি বিশ্বসেরা কনফারেন্সে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই পেপারটা এবার পেলো সেই কনফারেন্সের সেরা পেপারের পুরস্কার।

পেপার রিজেক্ট হয়েছে, এই ব্যাপারটাকে তাই ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। অধিকাংশ গবেষণাপত্র কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে তবেই প্রকাশিত হয়। বরং প্রতিটি প্রত্যাখ্যানকে দেখুন পেপারটির মান বাড়াবার সুযোগ হিসাবে। রিভিউ এ বলা ব্যাপারগুলাকে ঠিক ঠাক করুন, আর দরকার হলে অন্য জার্নাল বা কনফারেন্সে পেপারটা জমা দিন। এক সময় না এক সময় পেপারটি প্রকাশিত হবেই, গবেষণায় যদি খুঁত না থাকে। ধৈর্য্যই হলো গবেষকদের প্রধান শক্তি। আমার ছাত্রাবস্থায় প্রতিবার পেপার রিজেক্ট হলে সপ্তাহখানেক মন খারাপ করে থাকতাম। আমার প্রফেসরকে দেখতাম কোনো প্রতিক্রিয়াই নাই তাঁর। আস্তে আস্তে বুঝলাম, সেটাই করণীয়, একবার লাগে নাই তো কী হয়েছে, রবার্ট ব্রুস মোডে চলে যান, লেখে থাকুন, এক সময়ে আসবেই সাফল্য।

৩) সময়ক্ষেপন - অনেক সময় লাগছে গবেষণা শেষ করতে? রাতারাতি কোনো কিছুর সমাধান আসে না। ভালো কাজের জন্য অনেক সময় লাগতেই পারে। কাজেই পিএইচডি করতে যদি সময় বেশি লাগে, অমুকে তমুক বছরে শেষ করে ফেললো আর আপনি পারছেন না, এই চিন্তাধারাটা বাদ দেন। যার যার জীবন তার তার, অন্যের জুতায় পা না গলিয়ে নিজের মত করে চলুন।

আবারও তাই বলি, ধৈর্য্যই হোক গবেষকদের প্রতিদিনের সঙ্গী, এই ধৈর্য্যকে সাথে নিয়ে জয় করে ফেলুন হতাশা, সফল হোক গবেষণা ...

(অচিরেই বেরুচ্ছে আমার গবেষণায় হাতে খড়ি বইটির পরিবর্ধিত ২য় সংস্করণ। এই লেখাটি থাকছে নতুন সংস্করণে। পাওয়া যাবে আদর্শ প্রকাশনীতে।)

#গবেষণায়হাতেখড়ি #এলোচিন্তা #গবেষণা

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে লেখকের আরো একটি চমৎকার লিখাঃ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ! ফান্ডিং না পেলে কীভাবে পড়বেন?

===========================================================================================

যারা জি,আর,ই ভারবাল নিয়ে চিন্তিত তারা ভিডিও গুলো দেখতে পারেনঃ জি ,আর, ই হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড

জি,আর,ই জিওমেট্রি পার্ট নিয়ে যারা চিন্তিতঃ জিওমেট্রি ইন ওয়ান প্লে লিস্ট

You would also like to know: I20 is the most important document that you will need for a student visa in the USA.