কানাডিয়ান ম্যাপল দেখবো বলে! পর্বঃ ৩
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ এর বিমানটি ঢাকার মাটি ছুঁতেই মোহ ভঙ্গের শুরু।
বেতন বৃদ্ধি, নির্ঝঞ্ঝাট সরকারি চাকুরী বা প্রবল হোমসিকনেস যেটাই বলুন, তিন বছরের ধর্য্য আর প্রচেষ্টায় যেটা পেয়েছিলাম তাকে কিছুতেই ১০ বছরের অধ্বসায় আর সাধনার উপরে স্থান দিতে পারলামনা। লন্ডনের বন্ধুদের নিরুৎসাহ আর BCCB এর ভার্চুয়াল বন্ধুদের উপদেশ উপেক্ষা করে ২০১৬ এর ২৬ এ অক্টোবর কানাডার পত্রপাঠ চুকিয়ে দেশের বিমানে চড়ে বসলাম বিমানে ফেলে আসা চাকরিটা ফিরে পেতে।
দেশে ফিরে পরদিন থেকেই আবার বাসা খোজ শুরু করলাম। যেন সদ্যই নববিবাহিত যুবক বৌকে নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই খুজসে! বিমানের চাকরির সুবাধে একদিনেই খুব সুন্দর বাসা পেয়ে গেলাম ঢাকার অভিজাত পাড়া উত্তরা, সেক্টর ৫ এ।
অফিসে এসে রিপোর্ট করলাম পরদিন। সহকর্মী, সিনিয়র সবাই খুব বাহবা দিলো। আমার দেশপ্রেম, ভালো না খারাপ করলাম ফিরে এসে তা সবার আলাপের একটা বিশাল টপিক হয়ে দাঁড়ালো। ইতোমধ্যে হেড অফিস থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলাম এবং সাথে এও পেলাম আমার বিরুদ্ধে বিধি বঙ্গের অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বেতন স্থগিতের ঘোষণা। হায়রে, কোথায় বিমানকে ভালোবেসে ফেরত এলাম তার বাহবা পাওয়ার কথা, পেলাম চাকরি খাওয়ার হুমকি! যাই হোক, সরকারি চাকুরী হওয়ায় উপরের মহলে কিছু জানাশোনা লোকের সহায়তায় এক মাসের মধ্যেই চাকুরী ফেরত পেলাম। শাস্তিটাও একমাসের বেতনের উপর দিয়েই গেলো।
অফিসে যার সাথেই দেখা হয়, অঘোষিত ভাবে কেন ফিরে এলাম তার কারণ দর্শানো নোটিশ জারি হয়! উত্তর দিতে দিতে জেরবার পরিস্থিতি! একজন পিয়নতো এমনও বললো স্যার বোধয় ওখানে সুবিধা করতে পারেন নাই না?!
উত্তরার অলি গলি, মার্কেট ঘুরে বেড়াই। কি হারাতে জাস্সিলাম তা ভেবে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। নিবিষ্ট মনে পার্ক, মাঠ চষে বেড়াই কিন্তু কি যেন ঠিক মিলছেনা। আগের সেই মুগদ্ধতা আর নেই। কেমন যেন রংচটা , ধূসর মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যেটা পীড়া দিতে লাগলো তা হলো যানবাহনের হর্ন আর আইন না মানার মহোৎসব। আগে যেটা কখনো খেয়ালি করিনি তাই এবার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
ভাবলাম যাই একটু বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা মেরে আসি। হাজারহোক ওরাওতো ফিরে আসার অনেকগুলো কারণের একটি! একজনকে কল দিলাম ধরলো না, আরেকজন- সেও বিজি। তৃতিয়, চতুর্থ জন ধরে বললো আজ হবেনা, তোকে পরে জানাচ্ছি! ভাবলাম, অসুবিধা নাই, কলিগরাত আছেই। বলা ভালো ইতিমধ্যে ওই দুইজন কলিগ বিয়ে সেরে ফেলেছেন এবং পরে জানতে পারলাম অফিস সময়ের পরে ওদের মোবাইল হাতে নেয়ার উপরে ছোটোখাটো নিষেধাগ্গা জারি করা হয়েছে! এভাবে প্রায় এক মাস কেটে গেলো। দেশে থাকা কোনো বন্ধুই আর সময় বের করতে পারেনা। আর বাকিরাত বুয়েট লাইফের পরপরই দেশ ছেড়েছে। যে একাকিত্বের ভয়ে কানাডা ছেড়ে এলাম তা দেখি আমাকে তাড়া করে এখানেই হাজির!
যাই হোক, ফিরে পাওয়া চাকরিতে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছি। হটাৎ এর মধ্যে ঘটে যায় সেই বিখ্যাত ঘটনা- প্রধানমন্ত্রীর নাট-বল্টু সরি, প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাট-বোল্ট ডিলা পাওয়া যায়। রুটিন মেইনটেনেন্স প্রব্লেম। একটু আগেই দুবাই ফ্লাইট করে আসা বিমানে ভিআইপি চড়িয়ে দিলেইতো আর তা ভিআইপি বিমান হয়ে যায়না! কিন্তু চাটুকারের এদেশে কাকে কে বুঝাবে? চেংদোলা করে হাতে দড়ি বেঁধে মারতে মারতে জেলে পুড়ে দেয়া হলো বিমানের সবচেয়ে যোগ্য এগারজন প্রকৌশলীকে। মনে রাখবেন পাঠক, মেধা আর কর্মদক্ষতায় সবার উপরে বলেই কিন্তু তাদেরকে ভিআইপি ফ্লাইট চেক করতে দেয়া হয়। এরা এমন সেই ১১ জন প্রকৌশলী, যারা সরকারি চাকুরীকে স্রেফ সময় কাটানোর বিষয় মনে না করে বিমানের জন্য নিজেদের স্বর্ণালী সময়গুলোকে বেয় করেছে। এদের মধ্যে এমন কয়জন ছিল যারা কখনো কখনো সারাদিন অফিস করার পর সারা রাতেও মাইন্টেনেন্সের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। বাংলাদেশের মতো ফাঁকিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের ধারা সম্পর্কে যারা অবগত তারা জানেন ২৫% কর্মকর্তা আছেন যাদের নির্মোহ ভালোবাসায় সরকারি প্রতিষ্টানগুলি এখনো ঠিকে আছে। বিমানের জন্য এরা ছিল সেই দলের শুরুতেই। এরপর শুরু হল যখন তখন যাকে তাকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন, হুমকি ধামকি। সূর্যের চেয়ে বালি অধিক গরম হলে যা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সুনজরের আশায় কাউকে না কাউকে জড়িত প্রমানের সে এক প্রানান্ত চেষ্টা। মনটা এক বিশাল ঘৃণা আর বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো। কাজে মনোযোগ দেয়ার সকল আগ্রহ আর পরিবেশ বিদায় নিয়ে সেখানে অজানা আতঙ্ক স্থান নিলো। চেক প্যাকেজ বানানোর কাজে এই অধম কিছুটা জড়িত ছিলাম। তাই কখন কোন ভিআইপির চক্করে পরে জেলে যেতে হয় সেই ভয় পেয়ে বসলো। এরমধ্যে চাটুকারিতার সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে বিমান পরিচালনায় গাফিলতির সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মহান সংসদে আইন পাশ হলো। দেশে ফেরাটা বুঝি পাপ হতে চললো!
প্রথম বারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারি চাকুরীতে পাকাপাকিভাবে ইস্তফা দিয়ে তবেই কানাডা ফিরবো ঠিক করলাম। আসলে পিঠে সুতো বেঁধে কখনোই লাফ দিয়ে বেশিদূর উঠা যায়না , সুতো আপনাকে ফিরিয়ে আনবেই। সুতো কেটে দিন, উপরে উঠা ঠেকায় কে?!
ইতিমধ্যে সুখবর পেলাম আমি বাবা হতে যাচ্ছি আর আমার বৌ মা! খুশি হবার সাথে সাথে কিঞ্চিৎ দুষ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লাম। আবার দেশ ছাড়ব জানি কিন্তু তাই বলে এত তাড়াতাড়ি বুঝিনি। ভেবেছিলাম বছর দুয়েক চাকরি করে বাড়তি কিছু টাকা সেভ করে তারপর আবার অনিচ্শিত জীবনের পানে বেরুবো। দেখতে দেখতে ৬ মাস পার হয়ে গেলো। আরতো দেরি করা যায়না। ৩০ সপ্তাহ পার হলে ফ্লাইও করা যাবেনা। যা থাকে কপালে, দিলুম পদত্যাগপত্র সাবমিট করে!
এইবার শুরু হল আরেক নতুন ঝামেলা। ফিরে আসার পর যেমন ঢুকতে দেয়নি সহজে ঠিক তার উল্টো এখন বেরুবার সময় আমি খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে গেলাম বিমানের জন্য! আমাকে ছাড়া তাদের চোলবেইনা! অরে ভাই তোমরা আমায় যেতে না দিলেই যে আমি থাকব তার কোনো কারণ আছে? সুতো আমি কেটে দিবই। এখানে বলে রাখা ভাল, আমি ফিরে আসার পর আমার অফিসের অনেক বড় সাহেবিই বিষয়টাকে অন্য আরো যারা ভিতরে ভিতরে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছেন তাদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্ঠা করছিলেন এই বলে যে "দেখেন , ঐখানে কোনো সুখ নেই, যদি থাকতো তবে আমি এলাম কেন? সুতরাং ঐসব চিন্তা বাদ দেন. " কথা যে একেবারে মিথ্যা তা কিন্তু নয়. তবে দিনশেষে একটা জিনিসই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, তা হলো নীরবে নিভৃতে আপনার মনের
কোণের লালিত স্বপ্ন, যা আপনি দেখে এসেছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। একটা ব্যাপার মনে রাখবেন, স্বপ্নকে ছোয়ার আগে অন্য আর যা কিছুঁই আপনি ছুঁন না কেন, অতৃপ্তি আপনাকে পিছু ছাড়বেনা! স্বাভাবিক প্রশ্ন এখানে, আমার তবে স্বপ্নটা কি?? জীবনতো একটাই। এর অর্ধেকটা হেসে খেলে আরাম আয়েশে কাঠিয়ে দিয়েছি। বাকি অর্ধেটা না হয় স্বপ্নের পিছনে কাটাই। মসৃন পথে গাড়ি চড়ার চেয়ে রোলার কোস্টারে চড়ে আকাঁবাকাঁ, করে উৎরাই পেরুনোর মাঝেও অনেক উত্তেজনা আছে বই কি?!
আল্লার নাম নিয়ে টিকিটটা কেটেই ফেললাম আবারও।........
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন!
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন!
লিখেছেনঃ
Maintenance Program Engineer, De Havilland Aircraft of Canada Limited, Canada
Studied, Bangladesh University of Engineering and Technology
Facebook: https://www.facebook.com/fahim.ahmed.376
Email: fahim50509@yahoo.com
linkedin: https://www.linkedin.com/in/afm-fakhruddin-9b621739
===========================================================================================
যারা জি,আর,ই ভারবাল নিয়ে চিন্তিত তারা ভিডিও গুলো দেখতে পারেনঃ জি ,আর, ই হাই ফ্রিকুয়েন্সি ওয়ার্ড
জি,আর,ই জিওমেট্রি পার্ট নিয়ে যারা চিন্তিতঃ জিওমেট্রি ইন ওয়ান প্লে লিস্ট
You would also like to know: I20 is the most important document that you will need for a student visa in the USA.
Related Posts
- আমি কিভাবে প্লেনের টিকেটে ২৫ হাজার টাকা সেভ করলাম
- উদ্দেশ্য - Permanent Residence (PR)
- কানাডিয়ান ম্যাপল দেখবো বলে! পর্বঃ ৪
- কানাডিয়ান ম্যাপল দেখবো বলে! পর্বঃ ২
- আমেরিকায় চাকরি Apply for OPT পর্ব-২.২
Recent Posts
- GRE verbal reasoning effective time management strategy
- Should you take home based GRE test?
- IELTS প্রবচন পর্ব - ০৮
- উচ্চশিক্ষায় সিজিপিএ বনাম জিআরই
- জি আর ই সম্পর্কে জানা অজানার কিছু মজার ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
Categories
- Interview
- Tutorial
- Standard Test
- Documents
- Decision Making
- Preparation
- Funding
- University Selection
- Living Abroad
- Others
- Scholarship
- Journals
- Application
- Research
- Life in USA
- International Tour
- Job
Tags
- USA
- Speaking
- IELTS
- GRE Math
- TOEFL
- GRE
- Europe
- SOP
- Sweden
- Canada
- video
- Research
- Mechanical
- Texas
- Miscellaneous
- Passport
- Resume
- CV
- Letter of Recommendation
- GMAT
- Germany
- Japan
- University Ranking
- Fulbright
- SAT
- publications
- Professor
- Masters
- PhD
- Back Bencher
- Low CGPA
- Australia
- Listening
- Study Plan
- Scholarship Application Bangladesh
- Commonwealth Shared Scholarship
- Merit Scholarships
- How to apply for commonwealth scholarship
- Chevening scholarship bangladesh
- Scholarship for bangladeshi students
- Advice
- Ethics
- higher study prep gre test prep
- VISA
- Wi-Fi
- Business graduate
- Air ticket
- Switzerland
- MBBS
- Medical
- Learning english
- Statement of Purpose
- GRE Verbal